ময়মনসিংহে অনুমোদন ও মানহীন হাসপাতাল ক্লিনিকে রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে
শিবলী সাদিক খানঃ
ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া, ব্রাহ্মপল্লী, ভাটিকাশর, বাঘমারাসহ বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অনেক নিম্নমানের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোতে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা এছাড়াও অবৈধভাবে গড়ে উঠছে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। অনুমোদনহীন ও মানহীন এসব ক্লিনিকে লাইসেন্স বছরের পর বছর নবায়ন হচ্ছে না। হাসপাতাল পরিচালনার অনুমোদন নিয়ে অনেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসেছেন।
বিভাগীয় তথ্য সূত্রে জানা যায় ময়মনসিংহে ২৫২টি হাসপাতাল ক্লিনিক অবৈধ রয়েছে এর গুটি কয়েক ক্লিনিক হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালের একশ্রেণীর চিকিৎসককে কমিশনের ফাঁদে ফেলে রোগীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাই বেশি প্রতারিত হয় বলে অভিমত চিকিৎসকদের।
সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় দুই কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এছাড়া শেরপুর জামালপুর নেত্রকোনা গাজীপুর ও সুনামগঞ্জের কিছু মানুষ এখানে চিকিৎসা করাতে আসে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি সরকারি হিসাবে দুই শতাধিক বৈধ ও অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। যার সবই নগরীর ব্যস্ততম চরপাড়ায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গড়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ বিশেষ করে নগরীর চরপাড়া, নয়াপাড়া, কপিক্ষেত, মাসকান্দা, বাঘমারা, ভাটিকাশর, কৃষ্টপুর, পাটগুদাম, রামকৃষ্ণমিশন রোড, সাহেব আলী রোড, চামড়া গুদাম ও কালীবাড়ী রোডসহ বিভিন্ন অলিগলিতে গড়ে উঠেছে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি ল্যাব। আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায়ও রয়েছে অসংখ্য ক্লিনিক ও হাসপাতাল।
ময়মনসিংহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, নগরীতে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে প্রায় ২০০। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ। সরকারি তালিকায় যেসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে তাদের বেশির ভাগ বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন করছে না। হাসপাতাল পরিচালনার অনুমোদন নিয়ে অনেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসেছেন। এছাড়া এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাবে নেই কোনো ডিপ্লোমাধারী টেকনিশিয়ান, নার্স ও প্রশিক্ষিত আয়া। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক দেখানো হয় কেবল খাতায়, আয়াদের নার্সের পোশাক পরিয়ে রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। অনেক ল্যাবে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। একজন চিকিৎসক বা পরীক্ষকের প্যাড ও সিল ব্যবহার করে রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। বাস্তবে একজন পরীক্ষকের পক্ষে এত ল্যাবে গিয়ে এসব রিপোর্ট দেখা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি ডা. হরিশংকর দাশ বলেন, ‘আমরা অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ল্যাব বন্ধ করার পক্ষে। স্বাস্থ্য বিভাগ চাইলে অনুমোদনহীন ও মানহীন হাসপাতাল ক্লিনিক সিলগালা করে দিতে পারে।’
ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলার অনুমোদনবিহীন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে তালিকা ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ও আউটডোরে সাধ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দেয়া হয়। এক হাজার শয্যার বিপরীতে তিন হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রতিদিন। চিকিৎসকরা হাসপাতালের ভেতরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য লিখেন। কেউ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে থেকে করালে আমরা নিষেধ করি না। কখনো কখনো বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে হয়। তবে দালালের কারণে রোগীরা প্রতারিত হয়।’ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নজরদারি প্রয়োজন মনে করছে সচেতন মহল।
আপনার মতামত লিখুন