ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে রাজধানীর পৈত্রিক সম্পদ ও ঘর ছাড়া সাবেক কাউন্সিলর মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) বিএনপি সমর্থিত সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ( সাবেক ৫২, বর্তমান ১৮ নাম্বার ওয়ার্ড, সেন্ট্রাল রোড, এ্যালিফ্যান্ট রোড ও নিউ মার্কেট এলাকা) মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের আমলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং রাজধানীর পৈত্রিক সম্পদ ও ঘর ছাড়া ছিলেন।
সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মীদের দ্বারা গুম হত্যার ভয় তাকে তাড়িয়েছে অন্যদিকে র্নিমম নির্যাতন অত্যাচার এবং একাধিক মামলায় আক্রান্ত হয়েছেন মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর।
পরিবারসূত্রে জানাযায়, মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর, মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীরের আপন ছোট ভাই। ১৯৮৪ সালে মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীরকে নিজ খরচে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুইডেন নিয়ে আসেন মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর। এরপর ১৯৮৭ সালে তার মা, ছোট বোন সামিয়া আক্তার রুমা (০৯), মোজাম্মেল হোসেন (১২) কে সুইডেন নিয়ে আসেন। এছাড়াও আফরোজ জাহান পারভীন, তার ছেলেসহ তাদেরকেও সুইডেন নিয়ে আসেন মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর। বর্তমানে মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর সহ অন্যান্য ভাই-বোনেরা সুইডেন বসবাস করছেন ।
মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, আমি ও আমার পরিবার সবাই সুইডেনের নাগরিকত্ব পেয়েছি।
তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তার আপন ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাকর্মীদের ছত্র-ছায়ায় থাকতেন।
সে বিভিন্ন সময় নানান অযুহাত ও সু-কৌশলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে হয়রানি নির্যাতন করতে আওয়ামী সরকারের কলাবাগান থানার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল (১৬ নং ওর্য়াড) এবং আওয়ামী সাবেক সভাপতি শহীদুল কবির শহীদ (১৮ নং ওর্য়াড) এর সহযোগীতায় সন্ত্রাসী ক্যাডার দিয়ে বিভিন্নভাবে হত্যা,গুম, প্রাণনাশের হুমকী অব্যাহত রেখে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ভিত্তিহীন মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে আমাকে আমার স্ত্রী, ষোল মাসের শিশু সন্তানসহ আমার চার (০৪) বছরের শিশু সন্তানকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো হয়।
বিএনপির সাবেক এই নেতা জাহাঙ্গীর বলেন, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়ে শহীদ জিয়ার আদর্শকে ধরে রেখে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন পদ পদবি অর্জন করি। আমি ছাত্র জীবন থেকেই ১৯৭৭ সালে গঠিত জাগো দলের অঙ্গ সংগঠন জাগো ছাত্রদল ঢাকা মহানগরীর আহব্বায়ক এবং জাগো ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় আহব্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলাম। ১৯৭৮ সালে যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হয় তখন যুব দল ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য ও ধানমন্ডি থানার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম।
১৯৮৪ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সময় রাজনৈতিক অস্তিরতার কারণে দেশে বসবাস করা আমার জন্য ঝুকিঁপূর্ণ ও হুমকীর সম্মুখীন হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সাইফুর রহমান নান্টু সহ অন্যান্য শুভকাঙ্খী ব্যক্তিবর্গের সার্বিক সহযোগীতায় আমার জীবন রক্ষার্থে সুইডেন পাঠিয়ে দেন। সুইডেন গিয়ে জাতীয়তাবাদী দলের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
অতপর সুইডেন,ডেনমার্ক,নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। পরে সেই সব দেশে আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়। পরবর্তীতে সুইডেন শাখার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি’র) সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করি।
এরপর ২০০২ সালে স্বদেশে এসে বর্তমান ১৮ নং ওর্য়াড ( সাবেক ৫২ নং ওর্য়াড ) থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কমিশনার পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে নির্বাচিত হই। ২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনগনের সেবা করি। এর মধ্যেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি।
মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায় ২০০৯ সালে দলীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি। স্থানীয় জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে জয়ের দারপ্রান্তে নিয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামীলীগের প্রার্থী সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর ও গুলি ছুড়ে কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করে। এতে কিছু কেন্দ্র স্থগিত করা হয়। পরে ঐ বছরেই ১৬ মার্চ পূনঃ নির্বাচন দেওয়া হয়। তখন আওয়ামীলীগ প্রার্থী সমর্থকরা লাঠি, বৈঠা, অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে কেন্দ্র দখল করে নিজেরাই ভোট দিয়ে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
তিনি দুঃখ ভারাক্লান্ত মনে বলেন আমার দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংশ করার জন্যে আমারই আপন ছোট ভাই আলমগীর সাবেক সরকারের বিভিন্ন ক্যাডার বাহিনী দ্বারা একের পর এক মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভুল ব্যাখা দিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন মিডিয়াতে মিথ্যে তথ্যের বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে।
জাহাঙ্গীর আরোও বলেন, সবেক আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আমার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা আমাকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বিতারিত করে। রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন ৯০ নাম্বার সেন্ট্রাল রোডের দুই কাঠা জায়গার উপর ছয় তলা বিশিষ্ট বাড়ি সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের যোগসাজসে পুরো বাড়িটি ভোগ দখল ও আত্মসাৎ করে।
এ বাড়ীর দখল নিশ্চিত করতে ছোট ভাই আলমগীর বিগত ২০১৭ সালে নিজে বাদী হয়ে আমার ও আমার স্ত্রীর নামে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
আমার পিতা এ কে আহমদ হোসেন কোন জিডি ও মামলা করে নাই। বিগত ২০১১ সালে ১৩ই ফেব্রুয়ারি একটি হলফনামায় অঙ্গীকার করে গেছেন। তিনি হলফ নামায় বলেছেন, জিডি ও মামলা এসব ভুয়া বানোয়াট ও মিথ্যা। এরপরও ভিত্তিহীন ভাবে মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর বিভিন্ন প্ররোচনায় বাড়ির বিষয়ে কোর্টে মামলা দায়ের করে। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর বিজ্ঞ আদালত সবকিছু তদন্ত সাপেক্ষে মামলাটি খারিজ করে দেন। বিজ্ঞ আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, পৈত্রিক সম্পত্তির ওয়ারিশ হিসেবে চারতলার ফ্ল্যাটটি জাহাঙ্গীর বসবাস করবেন ।
এরপর চলতি বছরে ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীরের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। পিটিশন মামলার নাম্বার ১১১। মামলাটি চলমান রয়েছে ।
মোতাহার হোসেন জাহাঙ্গীর গণমাধ্যমকে বলেন, তার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর দেশ-বিদেশে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে এবং বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে থেকে দেশ-বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত তার এই অপকর্ম চালিয়ে আসছে। আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে এই সকল হয়রানি নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পেতে সহযোগিতা কামনা করছি।
আপনার মতামত লিখুন