বিপুর লুটেরা সহযোগী বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি গাউছ মহিউদ্দিন কিভাবে বহাল পিজিসিবিতে!
আওয়ামীলীগ সরকারের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ খ্যাত বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর দোসর, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এর এমডি একেএম গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদ এখনও স্বদাপটে বহাল রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি, দলবাজ এই কর্মকর্তা বহু অপকর্মের মূলহোতা।
অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে মোটা অংকের লেনদেনের মাধ্যমে ম্যানেজ করে পিজিসিবির এমডি পদটি বাগিয়ে নেন তিনি। ওই প্রতিমন্ত্রীর বিশেষ ফাইল নোটের পরিপ্রেক্ষিতেই এমডি পদে আসীন হওয়ার প্রমাণপত্রও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অপকর্ম করে নিয়োগ পাওয়াসহ কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে স্বপদে বহাল থাকা এমডি গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদ এর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী বিপুর আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় বিগত সময়ে কোনো অভিযোগই পাত্তা পায়নি। সবশেষে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ভুক্তভোগিরা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেও সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি গাউছ মহীউদ্দিন রাতারাতি ভোল পাল্টে বিএনপি সমর্থক বনে গেছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনকারীদের হুমকি ধমকি দিয়ে চলছেন। এ নিয়ে পিজিসিবিতে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরইমধ্যে পিজিসিবি প্রধান কার্যালয়ের সামনে সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করে গাউছ মহীউদ্দিনকে অপসারণের আল্টিমেটাম দিয়েছে। বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শেষে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বিদ্যুত উপদেষ্টাসহ সচিবের কাছেও। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, এ ধরনের আরো অভিযোগ আছে, আমরা শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু এরপরও অভিযুক্ত এমডি কাকে ম্যানেজ করে স্বপদে বহাল রয়েছেন তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
পাওয়ার গ্রিড পরিচালনা পর্ষদ কতৃক গৃহীত নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী হন আবদুর রশিদ খান। তাকেই সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও দলীয় বিবেচনায় গাউছ মহীউদ্দিনকে নিয়োগদানে বাধ্য করেন প্রতিমন্ত্রী বিপু। যা ছিল সম্পর্ণ বেআইনী এবং কোম্পানীর এমওইউর পরিপন্থী।
জানা গেছে, ফাইলনোটে (৫০ নম্বর) লেখা ছিল, এমতাবস্থায় পিজিসিবি নিয়োগ কমিটির ১৫/০৪/২০২৩ তারিখ অনুষ্ঠিত সভার সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে মেধা তালিকার শীর্ষে অবস্থানকারী জনাব আবদুর রশিদ খানকে প্রাথমিকভাবে নিয়োগের তারিখ থেকে ০১ (এক) বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। পরবর্তীতে তার কর্মমূল্যায়ন ও বোর্ডের সুপারিশের আলোকে চুক্তিভিত্তিক চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। অথচ পরবর্তীতে ২৮ মে ২০২৩ তারিখের ৫২ নম্বর ফাইলনোটে প্রতিমন্ত্রী সবুজ কালিতে লিখেন, ‘২ নং ক্রমিকের জনাব এ, কে, এম, গাউছ মহীউদ্দিন আহম্মেদকে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে (পরিপত্র জারি নং ৩৮৭)।‘
নিয়ম ভঙ্গ করে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়ার বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন ছাড়াও বিশেষ উপহার পেয়েছিলেন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তার মালিকানায় কেরানীগঞ্জে গড়ে ওঠা হাউজিংয়ের উপর থেকে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন অপসারণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেন নতুন নিয়োগ পাওয়া এমডি গাউছ মহীউদ্দিন। প্রধান সঞ্চালন লাইন আন্ডারগ্রাউন্ড করার লক্ষ্যে পাওয়ার গ্রিডের সংশ্লিষ্ট কারিগরী টিমের যৌক্তিক বাধাকে উপেক্ষা করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা কমিশন হতে পিডিপিপি অনুমোদনও করিয়ে নেয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা অবিলম্বে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের প্রকল্পটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে এমডি গাউছ মহীউদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও বেশুমার লুটপাটের অসংখ্য অভিযোগ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। পাওয়ার গ্রিডের সব সঞ্চালন লাইনে কনভেনশনাল কন্ডাক্টর ব্যবহারের পরিবর্তে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যের অ্যালুমিনিয়াম কন্ডাক্টর কম্পোজিট কোর ব্যবহার করার মাধ্যমে গত আট বছরে দেশের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা অপচয় করিয়েছেন তিনি। কোনো রকম কারিগরি গবেষণা ব্যতিরেকে বোর্ডসভায় বিবিধ আলোচনায় উত্থাপন করে এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিনিময়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা নিজের পকেটে ভরেছেন গাউছ মহীউদ্দিন।
এই দলবাজ এমডি‘র নির্দেশেই সার্ভিস রুলকে চরমভাবে অমান্য করে ছাত্রলীগের কর্মীদের ভুয়া অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট তৈরি করে তাদের চাটুকার কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া এবং দলীয় কর্মী বিবেচনায় একের পর এক পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। এমডির অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তিনি অনৈতিক এবং আইনবহির্ভূতভাবে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি হতে ছাঁটাই করে দিয়েছেন, হয়রানির মুখে ফেলেছেন কয়েকশ‘ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে।
পিজিসিবির প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রশ্ন তুলে বলছেন, একজন দুর্নীতিবাজ লুটেরা কর্মকর্তা পিজিসিবির এমডি পদে এখনো কিভাবে বহাল থাকছেন? তার খুটির জোর কোথায়? আওয়ামীলীগ সরকারের দুর্নীতি লুটপাটের দোসর, দলবাজ এমডি গাউছ মহীউদ্দিনকে ঘিরে পিজিসিবিতে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে পিজিসিবিতে বিশৃঙ্খলাসহ যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা কর্মচারীরা অবিলম্বে দলবাজ লুটেরা গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদ মুক্ত পিজিসিবি পূণর্গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন। এসব বিষয়ে এ কে এম গাউছ মহীউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য নেয়ার জন্য বারবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন