রাঙামাটি ছাত্রলীগের কমিটিতে অছাত্র বিবাহিত চাকরিজীবী টেন্ডারবাজ নিয়ে নতুন কমিটি গঠন
২০১৫ সালে এক বছরের জন্য গঠিত হলেও রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সেই কমিটি ভেঙেছে ৯ বছর পর। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার দুমাস পর ৬২ সদস্যের আংশিক সুপার কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নতুন কমিটিতে সভাপতি মো. রনি হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সোহাগ চাকমা।
রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের ৬২-সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সাবেক ছাত্র নেতাসহ অনেকের মধ্যে। তাদের এ অসন্তোষ হওয়ার পিছনে অনেকগুলি কারন রয়েছে যেমন-নতুন কমিটি গঠনে সিনিয়র-জুনিয়র মেইনটেইন না করা, কমিটিতে একাধিক বিবাহিত পুরুষকে অন্তর্ভুক্ত করা, এসএসসি পরীক্ষায় দু’দুইবার ফেইল করা, ছাত্রদল ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) থেকে ছাত্রলীগের যোগদানকৃতদের কমিটিতে রাখা, গঠনতন্ত্র নিয়ম না মেনে ২৯ বা ৩০ ঊর্ধ্ব পুরুষকে ও অছাত্রদের কমিটিতে স্থান দেওয়া।
এছাড়া, নতুন কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই বেসরকারী সংস্থা পদক্ষেপ ও কোম্পানিতে চাকরীরত, কাঁচামালের ব্যবসা, ঠিকাদার, কাপড়ের দোকানদার, শুটকী ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বিবাহিতদের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে যারা পদ ও স্থান পেয়েছে তারা হচ্ছে মিজানুর রহমান চৌধুরী মাহিন (সহ-সভাপতি), তার নাকি দুটি স্ত্রী ও রয়েছে তিন বছর ধরে বিবাহিত, মিনহাজুর রহমান (সহ- সভাপতি), এক বছর ধরে বিবাহিত, এবিএম জোনায়েত (সহ-সভাপতি) তিনি বউ নিয়ে সোসাল মিডিয়াতে একটিভ, ও আসাদুজ্জামান ইফাত (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক), ও ইউনুস মিয়া (সহ-সভাপতি)।
বয়স উর্ধ্বের মধ্যে রয়েছে অভি মারমা (সহ-সভাপতি) নেই ছাত্রত্ব আবার বিবাহিত, বেলাল খান (সহ-সভাপতি), বকুল চাকমা (সহ- সভাপতি), মো: আব্দুল মোতালেব (সহ-সভাপতি), তপন ত্রিপুরা (সহ-সভাপতি) এবং খালেদ সাইফুল্ল্যা রুবেল (সহ-সভাপতি), পারভেজ (সহ সভাপতি)এদের ছাত্রত্ব নেই বয়স নেই।
আরো অভিযোগ উঠে যে, সাদমান আহমেদ তামিম, মেট্রিক দুইবার ফেল নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পেয়েছে, দীপংকর দে (সহ-সভাপতি) ছাত্রদল থেকে আগত এবং জেলা ছাত্রদলের সদস্য, ও এন্টন চাকমা (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক) পিসিপি থেকে যোগদান করেছিল ছাত্রলীগে। মোঃ পারভেজ ( সহ সভাপতি) অছাত্র, টেন্ডারবাজি মামলার আসামি, বলতকার আসামী, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, অপু দেবনাথ (সহ সভাপতি) ঠিকাদার প্রতিষ্ঠিত, টেন্ডারবাজ ও বিবাহিত।
সিনিয়র সহ সভাপতি দীপংকর দে, ছাত্রদলে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লো গান দিয়েছিল এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপিতে মিছির করেছিল। সাকিল আহম্মেদ (সহ সভাপতি) চাদাবাজী মামলার আসামী, অছাত্র, আনোয়ার হোসেন কায়সার (যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক) নারী সংশ্লিষ্ট অশ্লীল অডিও রয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এডিটিং করে প্রতিপক্ষ ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সে নিজেকে একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি বলে দাবি করেন।
সদ্য নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: রনি হোসেন খাগড়াছড়ি জেলাতে অনেক বছর ধরে বেসরকারী সংস্থা পদক্ষেপ এ চাকরীরত রয়েছে, ও সামশুল আলম (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক) কাপড়ের দোকান ব্যবসায়ী, রুবেল ঘোষ (সহ-সভাপতি) বনরুপা বাজারে কাঁচামাল ও মিঠু বড়-য়া (সহ- সভাপতি) শুটকী ব্যবসায়ী, মো: পারভেজ (সহ- সভাপতি) সে ওয়ার্ড যুবলীগে সিভি জমা দিয়েছে এবং সে মাদকাসক্ত, ইমাম হাসান (সহ-সভাপতি) প্রাণ কোম্পানি আরএফএল এ চাকরীরত ও বিজয় বড়ুয়া শোভন (সহ-সভাপতি) ইতি পূর্বে ছাত্রলীগের কোন কমিটি এবং ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলনা।
মোঃ রনি হোসেন ও মোহাগ চাকমা ছাড়াও যোগ্য ত্যাগি মেধাবি দলের দুঃসময়ে কঠিন আন্দোলনে সম্পৃক্ত সাংগঠনিক ছাত্রনেতা আরো অনেকে ছিলো। যারা দীপংকর তালুকদারের মতাদর্শ নিয়ে রাজপথে দীর্ঘ বহুবছর ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে, দলীয় কর্মকান্ড, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে কাজ করে দীপঙ্কর তালুকদারকে অনুকরণ করার পর ও তারা মুল নেতৃত্বে আসেনি যা দলে ও জনমতে বিশাল হতাশা ও প্রশ্ন। কেউ চিনে না জানেনা সংগঠনের সাথে সক্রিয় নয় এমন ছাত্রকে নির্বাচিত করায় দলের প্রায় নেতৃবৃন্দরা হতাশা জানিয়েছে যারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। সভাপতি সম্পাদক ছাড়াও ৬২ জনের অন্যান্যরা যারা পদ পেয়েছে তাদের মনোনীত করার ক্ষেত্রে কোন সিন্ডিকেটের প্রভাব আছে বলে ও জানিয়েছেন। এক প্রকার রাঘববোয়ালোই তাদের স্বার্থ ও উদ্দ্যেশ্য জাহির এবং রাঙ্গামাটি রাজনীতিকে ভবিষ্যতে জিম্মি করতে এমন কমিটি সাজিয়ে বলে জানান তারা, রাঙ্গামাটি জেলার আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে নষ্ট করা এবং সংগঠনটির সভাপতি সম্পাদকের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এমন কাজ করেছে বলা হচ্ছে এই রাঘববোয়াল নতুন সেন্ডিকেটের কারসাজি।
সদ্য বিদায়ী সাবেক রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা জানান যে, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিবাহিত, যাদের ছাত্রত্ব নেই এবং যাদের বয়স ২৯ বছরের উর্ধ্বে তারা কখনও ছাত্রলীগের কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেনা।
আরেক সাবেক ছাত্র নেতা মামুনুর রহমান মিটু বলেছেন বর্তমান কমিটিটি ভাল হয়নাই। বয়স মানা হয়নাই, বিবাহিত, চাকরীজীবি ও ব্যবসায়ী সবাই বর্তমান কমিটিতে ঢুকে পড়েছে। সাবেক ছাত্র নেতা শফিউল আজম এর সাথে কথা বললে তিনিও একই কথা বলেছেন।
সাবেক ছাত্র নেতারা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন নিয়ে যে অনিয়ম হয়েছে তার জন্য দোষ পোষাচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকগণ।
এ ব্যাপারে সাবেক ছাত্র নেতা ও সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো: আবু মুসা বলেছেন নির্বাচন বা বাছাই করার সময় তাদের কাছ পরামর্শ বা মতামত নেয়া হয়নি এবং সেটি অগ্রহণযোগ্য কিংবা ঠিক হয়নি। অথচ অনেক ভাল ছাত্র রয়েছে দীর্ঘ সময় যারা রাজপথে ছিল তাদের থেকে নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়া যেত। বর্তমানে এ কমিটিটি নিয়ে অনেকের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে, এখানে অনেক বিবাহিত, চাকরীজীবি, ব্যবসায়ী ও অছাত্রদের স্থান দেয়া হয়েছে যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।
সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেছেন ছাত্রদের নিয়ে কমিটি করলে ভালো হতো।
আপনার মতামত লিখুন