বিজয় স্মরণী কলেজ সীতাকুণ্ড এর উপাধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তুঘলকি কান্ড
বিজয় স্মরণী কলেজ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার একটা গুরুত্বপূর্ণ অনার্স কলেজ, এই কলেজটির ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার অথচ সরেজমিনে দেখা গেছে নিয়মিত ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির সংখ্যা এক তৃতীয়াংশেরও নীচে নেমে গেছে!
এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে দীর্ঘদিন ধরে কলেজ গভর্ণিং বডি’র ১৪ জন সদস্য থাকলেও মাত্র তিন জন সদস্যের খেয়াল খুশি মতো কর্মকান্ড যেনো নিয়ম ভাঙ্গার নিয়মে পরিণত হয়েছে ফলে কলেজের সামগ্রিক পরিস্থিতি শিক্ষা শৃঙ্খলার চরম অবনতি ডেকে এনেছে! এরই মধ্যে ১৯ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখ বর্তমান গভর্ণিং বডি’র মেয়াদ শেষ তথাপিও চরম অনিয়মের মধ্যদিয়ে তুঘলকি কান্ড ঘটিয়ে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন পূর্বে ১৮ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখ তড়িঘড়ি করে কলেজের উপাধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা আহবান করা হয়েছে, ইতিপূর্বে গভর্ণিং বডি’র সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যের মতামতের তোয়াক্কা না করে তাদের অজান্তে কতিপয় শিক্ষককে উপাধ্যক্ষ পদের জন্য বাছাই করা হয়েছে আবার বাছাই কৃত প্রার্থীদের মধ্যে এমন দুই জনকে বাছাই করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজন অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু জাফর সিদ্দিকী যিনি ইতিপূর্বে কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন কালীন উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ সহ ব্যপক আর্থিক অনিয়ম করেন, তিনি অনৈতিক উপায়ে একজন নন এমপিও প্রভাষক মুজিবুল হককে সহযোগী অধ্যাপক দেখিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে প্রধান পরীক্ষক নিয়োগ দেন পরে অবশ্য গভর্ণিং বডির হস্তক্ষেপে জাবি কর্তৃক তা বাতিল হয় এমন অনেক অনিয়ম দূর্নীতির দায়ে ইতিপূর্বে তাঁকে কলেজ থেকে চূড়ান্ত ভাবে বহিষ্কার করা হয় এবং এই বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।
অপর জন হলেন সহকারী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন যিনি স্নাতকোত্তর পরীক্ষা পাসের পূর্বে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ লাভে অভিযুক্ত হয়েছিলেন, এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আবু জাফর সিদ্দিকীর দূর্নীতির বিরুদ্ধে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে জাবি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস এর শিক্ষক বশির আহাম্মদ জনাব আবু জাফরের বিরুদ্ধে দূর্নীতির তথ্য প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও তদন্ত কমিটির বিগত ২৮ আগষ্ট ২০২২ খ্রিস্টাব্দে দাখিল কৃত রিপোর্টে তিনি অজানা কারণে স্বাক্ষর করেননি তথাপিও আবু জাফর গংদের তদবিরে সেই পক্ষপাতদুষ্ট শিক্ষক বশির আহম্মদকেই বিশেষজ্ঞ হিসেবে জাবি কর্তৃক এই নিয়োগ কমিটিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
চরম অনিয়ম সমূহ হলো-
(১) প্রাপ্ত আবেদনের সংক্ষিপ্ত তালিকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ড / ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়নি। (২) প্রাপ্ত আবেদনসমূহ যাচাই-বাছাইয়ের নিমিত্তে কলেজ গভর্ণিং বডি কর্তৃক রেজ্যুলিউশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্য হতে ৩( তিন) সদস্য বিশিষ্ট একটি আবেদন পত্র যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়নি।
(৩) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে (জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস ব্যতিরেকে) নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি (৪) কলেজ গভর্ণিং বডি কর্তৃক বরখাস্তকৃত এবং আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুজাফর সিদ্দিকীকে প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়েছে (!)(৫) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব রক্ষণ অধিদপ্তরের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদকে প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়েছে। (৬) অন্তত এক সপ্তাহ পূর্বে গভর্ণিং বডি’র মিটিংয়ের নোটিশ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও, ১৯ ফেব্রুয়ারী রাতে হোয়াটসঅ্যাপে নোটিশ পাঠিয়ে ২০ফেব্রুয়ারী তড়িঘড়ি করে মিটিং শেষ করে উপস্তিতির স্বাক্ষর নিলেও এজেন্ডার বিষয়ে সিদ্ধান্ত সমূহ আজ পর্যন্ত গভর্ণিং বডির ১৪ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জনই কিছু জানেন না।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুসরণীয় সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে চলমান কতিপয় কর্মকাণ্ড যা অচিরেই কলেজটিকে চরম বিশৃঙ্খলার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে বলে এলাকাবাসী, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং শিক্ষক বৃন্দ আশংকা প্রকাশ করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন